
আপডেটঃ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ৩০, ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ফের জটিল হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রকাশিত সুপারিশে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অভিযোগ করেছে, তাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তিগুলো চূড়ান্ত প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে কমিশনের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে বলে মনে করছে তারা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার যমুনায় এক সভায় বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর-বাহির উভয় দিক থেকে বড় শক্তি কাজ করছে। তাই ঝড়-ঝঞ্ঝা যাই আসুক, সরকারকে তা অতিক্রম করে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তার ভাষায়, তারা যেসব বিষয়ে একমত ছিলেন না, সেখানে নোট অব ডিসেন্ট যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবে সেগুলোর কোনো উল্লেখ নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও অভিযোগ করেন, কমিশন জাতীয় ঐকমত্য নয়, বরং অনৈক্য তৈরি করেছে।জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দ্রুত গণভোটের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে বলেন, গণভোট বিলম্ব হলে জাতীয় নির্বাচনও জটিলতায় পড়বে। অন্যদিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী কমিশনের প্রস্তাবনায় একাধিক অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। তার মতে, সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত অংশে ‘করতে পারবে’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘করবে’ করা দরকার, যাতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা কোন সাংবিধানিক ক্ষমতায় আদেশ জারি করবেন। তার মতে, প্রধান উপদেষ্টার নামে আদেশ জারি মানে কার্যত সংবিধান স্থগিত করা। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদও বলেন, খসড়ায় আদেশের আইনি ভিত্তি অস্পষ্ট, ফলে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে যদি গণভোটে জুলাই সনদ পাস না হয়। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, কমিশন যদি স্বাক্ষরিত রূপেই সনদটি উপস্থাপন করত, ভুল বোঝাবুঝি হতো না। নতুন প্রস্তাব যুক্ত হওয়ায় অনিশ্চয়তা বেড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিশনের দীর্ঘ আট মাসের পরিশ্রম এখন প্রশ্নের মুখে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। অর্থনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব নির্বাচনী পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল মনে করেন, যারা নিজেরাই রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষ, তারা অন্যদের বলে দিচ্ছেন দেশ কিভাবে চলবে—এটা জনগণ মেনে নেবে না। তার মতে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলো দলগুলো মানবে না, কারণ এগুলো জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে তৈরি হয়নি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক ও আলোচনার পর জুলাই সনদ তৈরি করা হয়। ১৭ অক্টোবর বেশিরভাগ দল এতে স্বাক্ষর করে, তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল এখনো সই করেনি। কমিশন মঙ্গলবার সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এ অনৈক্য দূর না হলে শুধু কমিশনের কাজই নয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
IPCS News : Dhaka :