মোঃ হিমেল মিয়া।
মনোহরদী উপজেলা প্রতিনিধি।
গত এক সপ্তাহ ধরে নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রচণ্ড গরম অনুভুত হচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম অন্যদিকে ক্রমাগত বিদ্যুতের লোডশেডিং। পল্লী বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে একবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে ঘুমতে পারছে না মনোহরদী বাসী।
জেলা বা পৌর শহরে বিদ্যুৎ কিছুটা সময় থাকলেও শহরতলী ও গ্রামগঞ্জের অবস্থা চরম পর্যায়ের। চলতি আমন মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও থেমে নেই লোডশেডিং। গেলো মাসে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন সংকটের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে। নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের চাহিদার তুলনায সরবরাহ অনেক কম পাওয়ার এই লোডশেডিং। সরবরাহ যা পায় তারা তাও সেটা প্রতিদিন সমান পায় না। তবে যতটুকুই পান কর্তৃপক্ষ চান তার সমবন্টন করতে।
এদিকে ঘন ঘন বিদ্যুত আসা যাওয়ার কারণে ফ্রিজ, টেলিভিশন, ফ্যানসহ বিভিন্ন মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা মনোহরদী বাসীর জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অসহ্য গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
তীব্র এই গরমে লোডশেডিংয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম করতে না পারায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। অনেকেই তীব্র তাপদাহ এবং লোডশেডিংয়ের কারণে খোলা জায়গায় হাতপাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করছেন। আবার কেউ খালি গায়ে গামছা গলায় বিদ্যুতের অপেক্ষায়। গরম আর লোডশেডিংয়ের মাঝে একটু স্বস্তির খোঁজে মধ্যরাতেও ঘরের বাইরে দেখা যায় অনেককে।
এ ব্যাপারে সাগরদী বাজারের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক মো. হাবিবুর মিয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় রাস্তায় থাহি। গরম হজম হইয়্যা গ্যাছে। এতদিন রাইতে একটু আরামে ঘুমাইছিলাম, এহন রাইতের ঘুমও হারাম হইয়্যা গ্যাছে। রাইতে তিন-চাইরবার কারেন যায়, ঘুমামু ক্যামনে।’
গ্রাহকদের অভিযোগ, মনোহরদীতে বর্তমানে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার অর্ধেকটা সময়ও মিলছে না বিদ্যুৎ। আবার উপজেলা পর্যায়ে অনেক স্থানেই রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০ ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ আসলে থাকে আধা ঘণ্টা, আর গেলে দুই ঘণ্টায়ও আসে না। বিদ্যুতের এমন বেহাল দশায় গ্রাহকরা বলছেন বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আমাদের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। বিবেকহীনভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা চলছে বিদ্যুতের ডিগবাজি।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গ্রাহকরা পল্লী বিদ্যুৎকে নিয়ে উপহাস সহ অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার দাবি করে আসলেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না জেলার গ্রাহকদের। ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ না থাকা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, আকাশে মেঘ উঠতেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাংস্কৃতি চালু রয়েছে মনোহরদীতে। এককথায় বলা চলে মনোহরদীতে বিদ্যুৎ নিয়ে চরম ধোয়াশায় রয়েছেন গ্রাহকরা।
নরেন্দ্র পুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে দিনের বেলা লোডশেডিং চলতে থাকে, রাতেও বিদ্যুৎ থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা মনোহরদী বাসী অস্বস্তির মধ্যে আছি। রাতের লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায় না। ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারছে না।’
গরমের জন্য মনোহরদীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মানুষের বেচা থাকাটাই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।এই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই মনোহরদীবাসী । মনোহরদী বাসী পল্লী বিদ্যুতের কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছে যাতে এই তীব্র লোডশেডিংয়ের মাত্রা অতি দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়।