প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি কী করেন? সম্ভবত মোবাইলটা হাতে নিয়ে প্রথমেই গুগলে কিছু একটা সার্চ করেন, তাই তো? কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, গুগলই কি একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন? এর বাইরেও বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে – আপনি জানেন কয়টা? জানলে অবাক হবেন, গুগল ছাড়াও এমন অনেক সার্চ ইঞ্জিন আছে যেগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য আরও বেশি উপযোগী? তাই আপনি যদি মনে করে থাকেন যে গুগলই একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন, তাহলে বলতেই হয় যে আপনি এক বিশাল তথ্যজগতের কেবল সামান্য প্রান্তটুকু দেখেছেন। তবে চিন্তার কারণ নেই। আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানব বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে, যার মধ্যে অনেকগুলোর নাম হয়তো আপনি আজকে প্রথম শুনবেন।
২০২৪ সালের তথ্যমতে, গুগলের গ্লোবাল সার্চ মার্কেট শেয়ার প্রায় 91.5%, কিন্তু বাকি 8.5% বাজারে শেয়ার করেছে কিছু অবাক করা নাম—যেমন রাশিয়ার Yandex, চীনের Baidu, প্রাইভেসি-ভিত্তিক DuckDuckGo, এমনকি পরিবেশবান্ধব Ecosia পর্যন্ত! এই সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিভিন্ন ব্যবহারকারী চাহিদা, ভাষা, সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি ৫০টি সার্চে একটি সার্চ হয় Bing-এ। আর Amazon? সেটাও একটা সার্চ ইঞ্জিন, তবে প্রোডাক্ট খোঁজার জন্য! আজকের এই লেখায় আমরা বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে আপনি শুধু ইনফরমেশন খোঁজার জন্য নয়, বরং সঠিক জায়গায়, সঠিকভাবে খোঁজার টেকনিকও জানতে পারবেন।
সার্চ ইঞ্জিন হলো একটি বিশেষধরনের সফটওয়্যার সিস্টেম বা অনলাইন টুল, যা ইন্টারনেটের বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে ব্যবহারকারীর প্রশ্ন বা কী-ওয়ার্ড অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ও উপযুক্ত তথ্য খুঁজে বের করে দেখায়। এটি মূলত ওয়েব ক্রলার (crawler) বা বটের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে একটি বিশাল ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করে রাখে, যেটাকে বলা হয় ইনডেক্স। এরপর যখন কেউ কিছু সার্চ করে, তখন সার্চ ইঞ্জিন তার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ইনডেক্সে থাকা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো সাজিয়ে দেখায়। গুগল, বিং, ইয়াহু, ডাকডাকগো ইত্যাদি হলো এর সাধারণ উদাহরণ। সার্চ ইঞ্জিন আমাদের সময় বাঁচায়, সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং জ্ঞান অর্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
না, গুগল একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন নয়—বরং এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন। StatCounter-এর ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, গুগলের গ্লোবাল সার্চ মার্কেট শেয়ার প্রায় ৯১.৫%, যা একে নির্দ্বিধায় শীর্ষস্থানে রাখে। তবে বাকি ৮.৫% বাজার দখল করে আছে অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন যেমন Bing (৩.১%), Yahoo (১.২%), Baidu (০.৯%), Yandex (০.৮%) এবং DuckDuckGo (০.৫%)। এই সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিভিন্ন অঞ্চল, ভাষা এবং ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি বা নির্দিষ্ট চাহিদার উপর ভিত্তি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন, Baidu চীনের বাজারে সবচেয়ে ব্যবহৃত, Yandex রাশিয়ায় জনপ্রিয়, আর DuckDuckGo প্রাইভেসি সচেতন ব্যবহারকারীদের মাঝে পরিচিত। তাই গুগল সবচেয়ে বড় হলেও, এটি মোটেও একমাত্র নয়—বিশ্বজুড়ে রয়েছে আরও অনেক বিকল্প, যেগুলো নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক সময় গুগলের চেয়েও কার্যকর হতে পারে।
গুগল শুধু একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়, এটি বর্তমানে আমাদের ডিজিটাল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন এটি চালু করেন, আর অল্প সময়েই এটি হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী তথ্য অনুসন্ধান প্ল্যাটফর্ম। গুগলের বিশেষত্ব হলো এর অ্যালগরিদম, যেটি দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করে। এটি ১৫০টিরও বেশি ভাষায় কাজ করে এবং প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন সার্চ পরিচালনা হয় এই একক প্ল্যাটফর্মে। Google Images, Google News, Google Scholar, ও Google Maps এর মতো সাব-সার্ভিসগুলো গুগলকে আরও শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। ব্যবহারকারীর আচরণ, আগ্রহ এবং লোকেশন বিশ্লেষণ করে গুগল সবচেয়ে উপযুক্ত ফলাফল দেখাতে সক্ষম, যার ফলে এটি এককথায় হয়ে উঠেছে “রাজাধিরাজ সার্চ ইঞ্জিন”।
Bing হলো মাইক্রোসফটের তৈরি সার্চ ইঞ্জিন, যা ২০০৯ সালে চালু হয় এবং দ্রুতই গুগলের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি ব্যবহারকারীর জন্য একটি ভিজ্যুয়ালি আকর্ষণীয় ইন্টারফেস দেয়, প্রতিদিন পরিবর্তনশীল ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজের মাধ্যমে। Bing-এর একটি বড় সুবিধা হলো এর মাইক্রোসফট ইকোসিস্টেমের সাথে সংযোগ, যেমন Windows, Microsoft Office, ও Cortana। এছাড়া এটি ওয়েব, ইমেজ, ভিডিও, নিউজ ও ম্যাপসহ বিস্তৃত সার্ভিস প্রদান করে। Bing-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো “Rewards Program”, যেখানে ব্যবহারকারী সার্চ করলেই পয়েন্ট অর্জন করতে পারে, যা দিয়ে বিভিন্ন গিফট বা ডিসকাউন্ট সংগ্রহ করা যায়। যদিও গুগলের তুলনায় এর মার্কেট শেয়ার কম, তবুও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এটি অন্যতম জনপ্রিয় বিকল্প।
ইন্টারনেট যুগের শুরুর দিকে Yahoo ছিল অন্যতম জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এবং পোর্টাল। ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত একটি ওয়েব ডিরেক্টরি হিসেবেই শুরু হয়, পরে সার্চ ইঞ্জিন, ইমেইল, নিউজ ও বিনোদন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। যদিও বর্তমানে Yahoo তার নিজস্ব সার্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে না (বর্তমানে এটি Bing-এর সার্চ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল), তবুও Yahoo.com এখনও অনেক ব্যবহারকারীর হোমপেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে নিউজ, ফিন্যান্স, স্পোর্টস ও লাইফস্টাইল বিষয়ক কনটেন্টের জন্য Yahoo একটি বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম। পুরনো ব্যবহারকারীদের জন্য নস্টালজিয়া এবং একটি পরিচিত ইন্টারফেস Yahoo-কে এখনও টিকে থাকতে সাহায্য করছে।
যারা অনলাইন গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য DuckDuckGo একটি আদর্শ সার্চ ইঞ্জিন। এটি ২০০৮ সালে Gabriel Weinberg দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মূল দর্শন হলো – “Don’t track users.” DuckDuckGo ব্যবহারকারীর সার্চ হিস্টোরি, লোকেশন বা ব্যক্তিগত তথ্য ট্র্যাক করে না, ফলে এটি একটি প্রাইভেসি-ফোকাসড সার্চ অপশন হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া এটি একাধিক সোর্স (যেমন Bing, Wikipedia ও নিজের ক্রলার) থেকে ফলাফল এনে একত্র করে। যদিও গুগলের মতো পারসোনালাইজড সার্চ নেই, তবুও যারা ট্র্যাকিং থেকে মুক্ত থাকতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন সার্চ হয় এই প্ল্যাটফর্মে।
Baidu হলো চীনের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন, যা ২০০০ সালে Robin Li ও Eric Xu দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত ম্যান্ডারিন ভাষাভাষী ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি এবং চীনা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে গুগলের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। চীনে গুগল নিষিদ্ধ থাকায়, Baidu প্রায় ৭৫% এর বেশি মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে চীনের সার্চ ইঞ্জিন বাজারে। এটি শুধুমাত্র সার্চ নয়, বরং নিজের এক বিশাল ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে—যার মধ্যে আছে মিউজিক সার্ভিস, ক্লাউড স্টোরেজ, ম্যাপ, ফোরাম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সেবা। চীনের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার কারণে, Baidu সেখানকার অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সার্চ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত।
Yandex হলো রাশিয়ার গুগল হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এবং ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে চালু হওয়া Yandex শুধু সার্চ নয়, বরং ম্যাপ, ইমেইল, ট্রান্সলেশন, রাইড-শেয়ারিং, ক্লাউড সার্ভিস ও এআই-চালিত টুলস প্রদান করে। এটি রাশিয়ার সার্চ মার্কেটের প্রায় ৬০% দখল করে রেখেছে এবং রুশ ভাষায় প্রাসঙ্গিক ফলাফল প্রদানের ক্ষেত্রে গুগলের চেয়েও দক্ষ বলা হয়ে থাকে। এর সার্চ অ্যালগরিদম রাশিয়ান গ্রামার ও ভাষার জটিলতা বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। তাই রাশিয়ার বাইরেও, যারা রুশ ভাষাভিত্তিক কনটেন্ট অনুসন্ধান করেন, তাদের জন্য Yandex একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম।
Ecosia এক অনন্য সার্চ ইঞ্জিন, যার প্রতিটি সার্চ সরাসরি পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে লাগে। ২০০৯ সালে চালু হওয়া এই জার্মান ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন তাদের আয়ের ৮০% পর্যন্ত ব্যয় করে গাছ লাগানোর প্রকল্পে, মূলত আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। Ecosia Bing-এর সার্চ টেকনোলজি ব্যবহার করে, তবে তাদের নিজস্ব সার্ভারে গোপনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সার্চ পরিচালনা করে। ব্যবহারকারীরা Ecosia ব্যবহার করে কতটি সার্চ দিলে একটি গাছ রোপণ হয়—তা লাইভ ট্র্যাকারেও দেখতে পারেন। এ পর্যন্ত ২০ কোটির বেশি গাছ রোপণ করেছে Ecosia, যা একে একটি সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব আন্দোলনের প্রতীক করে তুলেছে।
Startpage এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন, যা গুগলের সার্চ রেজাল্ট ব্যবহার করে কিন্তু ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে না—অর্থাৎ এটি প্রাইভেসি ও পারফরম্যান্সের মধ্যবর্তী সোনালী সংযোগ। নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক এই সার্চ ইঞ্জিনটি ২০০৬ সাল থেকে কাজ করছে এবং ইউরোপের কঠোর ডেটা প্রটেকশন আইনের (GDPR) অধীনে পরিচালিত হয়। Startpage ব্যবহার করলে গুগলের মতোই নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক ফলাফল পাওয়া যায়, কিন্তু আপনার আইপি অ্যাড্রেস, লোকেশন বা ব্রাউজিং হিস্টোরি ট্র্যাক করা হয় না। এমনকি প্রতিটি লিংকের পাশে “Anonymous View” অপশনও থাকে, যার মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন সম্পূর্ণ অজানা থেকে।
Qwant হলো ফ্রান্স-ভিত্তিক একটি সার্চ ইঞ্জিন, যা ইউরোপের প্রাইভেসি-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। ২০১৩ সালে চালু হওয়া এই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে না এবং কোনো ধরনের কুকি ট্র্যাকিংও চালায় না। Qwant-এর ইন্টারফেস আলাদা বিভাগে ফলাফল দেখায়—ওয়েব, নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেজ ইত্যাদি, যা তথ্য খোঁজার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ ও গোছানো করে তোলে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাইভেসি আইন মেনে পরিচালিত হওয়ায়, যারা ইউরোপে থাকেন বা প্রাইভেসি নিয়ে বিশেষভাবে সচেতন, তাদের জন্য Qwant একটি নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী বিকল্প।
Swisscows হলো সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক একটি সার্চ ইঞ্জিন, যা নিরাপদ, পারিবারিক এবং গোপনীয়তা-সচেতন সার্চ অভিজ্ঞতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি কোনো ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে না এবং কোনো ধরনের অশালীন বা সহিংস কনটেন্ট দেখায় না, ফলে এটি শিশু ও পরিবারবান্ধব সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে পরিচিত। Swisscows এর বিশেষত্ব হলো এর সেমান্টিক সার্চ টেকনোলজি, যা কেবল কীওয়ার্ড নয়, বরং সার্চের ভাব ও উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করে ফলাফল দেখায়। সুইস ডেটা প্রটেকশন আইন অনুসারে পরিচালিত হওয়ায় এটি একটি অত্যন্ত নিরাপদ বিকল্প—বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার বা অফিস ব্যবহারকারীদের জন্য।
Ask.com (পূর্বে Ask Jeeves নামে পরিচিত) একটি প্রশ্নোত্তরমূলক সার্চ ইঞ্জিন, যার মূল ধারণা হলো—ব্যবহারকারীরা তাদের অনুসন্ধানকে প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। যেমন “Why is the sky blue?” বা “How to cook pasta?” Ask.com সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয় বিভিন্ন সোর্স থেকে নেওয়া তথ্য এবং পূর্বে দেওয়া উত্তরগুলোর ভিত্তিতে। এটি ট্র্যাডিশনাল লিংক-ভিত্তিক সার্চের তুলনায় আরও মানবিক ও প্রাসঙ্গিক উত্তর প্রদানে চেষ্টা করে। যদিও গুগলের জনপ্রিয়তার ফলে Ask.com অনেকটাই ছায়ায় চলে গেছে, তবুও প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানের জন্য এটি এখনও কার্যকর।
Brave Search হলো Brave ব্রাউজারের তৈরি একটি প্রাইভেসি-কেন্দ্রিক সার্চ ইঞ্জিন, যা ২০২১ সালে চালু হয়। এর বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এটি সম্পূর্ণ নিজস্ব ইনডেক্স ব্যবহার করে, গুগল বা Bing-এর উপর নির্ভর না করে। Brave Search কোনো ধরনের ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ করে না এবং ট্র্যাকিংবিহীন ব্রাউজিং ও সার্চ অভিজ্ঞতা দেয়। এটি Open Source ভিত্তিতে তৈরি এবং সম্প্রতি AI-চালিত “Summarizer” ফিচার যুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীর প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়। যারা ব্রেইভ ব্রাউজার ব্যবহার করেন অথবা প্রাইভেসি-সচেতন, তাদের জন্য Brave Search একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বিকল্প।
WolframAlpha একটি অনন্য সার্চ ইঞ্জিন, যা মূলত গাণিতিক সমস্যা সমাধান, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং তথ্য নির্ভর অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের মতো ওয়েব লিংক দেখায় না, বরং সরাসরি হিসাব করে বা ডেটা বিশ্লেষণ করে ফলাফল উপস্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি টাইপ করেন “integrate x^2” বা “GDP of Bangladesh 2020”, তাহলে এটি সরাসরি সমাধান বা ডেটা চার্ট দেখাবে। শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি অসাধারণ টুল। WolframAlpha প্রমাণ করে যে সার্চ ইঞ্জিন মানেই শুধু ওয়েবসাইট খোঁজা নয়, বরং হিসাব করা, বুঝে বলা এবং বিশ্লেষণ করাও সম্ভব।
Wayback Machine হলো Internet Archive-এর একটি অংশ, যা ব্যবহারকারীদের পুরনো ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজের সংরক্ষিত সংস্করণ দেখতে সাহায্য করে। এটি ১৯৯৬ সাল থেকে ওয়েবসাইটগুলোর স্ক্রিনশট বা HTML স্ন্যাপশট সংগ্রহ করে রেখেছে। আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইট এখন বন্ধ পেয়ে থাকেন, কিংবা কোনো কনটেন্ট মুছে ফেলা হয়েছে, তাহলেও Wayback Machine-এর মাধ্যমে আপনি সেই সাইটের পুরনো অবস্থা দেখে নিতে পারেন। গবেষক, সাংবাদিক ও ওয়েব ইতিহাস বিশ্লেষকদের জন্য এটি একটি অমূল্য সম্পদ।
You.com একটি আধুনিক, AI-চালিত সার্চ ইঞ্জিন যা কাস্টমাইজড ও ইন্টারঅ্যাকটিভ সার্চ অভিজ্ঞতা দিতে প্রস্তুত। এটি ইউজারদেরকে নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী র্যাঙ্কিং সেট করতে দেয় এবং একইসঙ্গে AI চ্যাটবটের মতো রেসপন্সও প্রদান করতে পারে। You.com-এ বিভিন্ন মোড আছে—যেমন YouChat (চ্যাটবট), YouCode (কোড সার্চ), ও YouWrite (রাইটিং সহায়তা)। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—আপনার তথ্য গোপন থাকে এবং আপনি সার্চ রেজাল্টগুলোকে কিভাবে দেখতে চান তা নিজের মতো সাজাতে পারেন। যারা AI-ভিত্তিক স্মার্ট সার্চে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি ফিউচারিস্টিক অপশন।
Gibiru নিজেকে “Uncensored Anonymous Search” ইঞ্জিন হিসেবে দাবি করে। এটি মূলত এমন ব্যবহারকারীদের জন্য যাদের বিশ্বাস—প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনগুলো তাদের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে বা সেন্সর করে। Gibiru ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ বা শেয়ার করে না। এটি VPN-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউজারকে অজানা রাখে এবং সেন্সর-বিহীন কনটেন্ট দেখাতে চেষ্টা করে। যারা মূলধারার বাইরে বিকল্প ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য চান, তাদের জন্য Gibiru হতে পারে একটি অনন্য বিকল্প।
Boardreader একটি বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন, যা মূলত ফোরাম, কমিউনিটি বোর্ড ও ডিসকাশন প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়। Reddit, Quora, Stack Exchange, বা ছোট ছোট কমিউনিটি বোর্ডে যেসব আলোচনা হয়, তা Google বা Bing-এ সহজে না পেলেও Boardreader-এর মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণা, মতামত বিশ্লেষণ বা ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে Boardreader একটি অমূল্য টুল হতে পারে।
Dogpile একটি “meta search engine,” অর্থাৎ এটি একাধিক সার্চ ইঞ্জিন (যেমন Google, Bing, Yahoo) থেকে ফলাফল সংগ্রহ করে একটি জায়গায় উপস্থাপন করে। ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া এই সার্চ ইঞ্জিনটির লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো একত্রে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরা। Dogpile সাধারণত দ্রুত ফলাফল দেয় এবং কম ডুপ্লিকেট দেখায়, কারণ এটি বিভিন্ন সোর্স মিলিয়ে ফলাফল ফিল্টার করে। যারা বিভিন্ন দিক থেকে একসঙ্গে তথ্য যাচাই করতে চান, তাদের জন্য Dogpile একটি কার্যকর ও বুদ্ধিদীপ্ত পছন্দ।
শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর সার্চ ইঞ্জিনগুলো হলো WolframAlpha, www.you.com ও Google। WolframAlpha গাণিতিক, বৈজ্ঞানিক ও পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রশ্নের নির্ভুল ও সরাসরি সমাধান দেয়, যা একাডেমিক পড়াশোনায় অপরিহার্য। You.com শিক্ষার্থীদের জন্য AI-সহায়তায় কাস্টমাইজড সার্চ, কোডিং সহায়তা এবং লেখালেখির টুলস সরবরাহ করে। Google তার বিশাল তথ্যভাণ্ডার ও সহজ ইন্টারফেসের কারণে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে বা রিসার্চ শুরু করতে আদর্শ। তাই “18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন”-এর মধ্যে এই তিনটি শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে সেরা।
কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য প্রয়োজন হয় দ্রুত, প্রাসঙ্গিক এবং ইনস্পায়ারিং তথ্য। এ ক্ষেত্রে You.com-এর AI-চালিত YouWrite ও YouChat টুলস লেখালেখি, স্ক্রিপ্টিং বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তৈরিতে অসাধারণ সহায়তা করে। Brave Search ট্র্যাকিং ছাড়াই ক্রিয়েটরদের ট্রেন্ডিং বিষয়বস্তু খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং প্রাইভেসিও বজায় রাখে। আর Google তো আছেই—নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট, ইমেজ, ট্রেন্ডস এবং ভিডিও কনটেন্ট খুঁজে বের করার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। “বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন”-এর ভেতর এই তিনটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য ভীষণ কার্যকর।
গবেষণায় তথ্যের নির্ভুলতা ও ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ, আর এ কাজে Internet Archive (Wayback Machine) অতীতের ওয়েবসাইট, মুছে ফেলা পেজ ও কন্টেন্ট বিশ্লেষণে অমূল্য। Google Scholar একাডেমিক পেপার, জার্নাল ও থিসিসের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। অন্যদিকে, Startpage গবেষকদের জন্য প্রাইভেসি বজায় রেখে গুগলের মতোই কার্যকর ফলাফল দেয়। যারা নিজ গবেষণায় তথ্য যাচাই, উৎসের ট্রেসিং এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেন, তাদের জন্য “বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন”-এর তালিকা থেকে এই তিনটি আদর্শ।
যারা ইন্টারনেটে নিজের তথ্য লুকিয়ে রাখতে চান বা ট্র্যাকিংবিহীন ব্রাউজিং পছন্দ করেন, তাদের জন্য DuckDuckGo, Startpage এবং Swisscows সবচেয়ে ভালো অপশন। DuckDuckGo কোনো ব্রাউজিং হিস্টোরি বা ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে না এবং অ্যাড ট্র্যাকিং রোধ করে। Startpage গুগলের সার্চ রেজাল্ট ব্যবহার করেও পুরোপুরি গোপনীয়তা রক্ষা করে। Swisscows শুধু প্রাইভেসি নয়, বরং নিরাপদ এবং পারিবারিক ফিল্টারযুক্ত সার্চ সুবিধাও দেয়। “ বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন”-এর মধ্যে এই তিনটি ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেরা।
গুগল হয়তো সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন, কিন্তু এটাই একমাত্র নয়—আর এটাই আজকের আর্টিকেলের সবচেয়ে বড় চমক। বিশ্বের 18 টি শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন কে ঘিরে আমাদের এই কনটেন্ট প্রমাণ করে, প্রয়োজন অনুযায়ী সার্চ ইঞ্জিন বেছে নেওয়া এক ধরনের স্কিল। আপনি যদি প্রাইভেসিকে অগ্রাধিকার দেন, তাহলে DuckDuckGo; যদি ছবি বা ভিডিওতে ফোকাস করেন, তাহলে Pinterest কিংবা YouTube সার্চই হতে পারে সেরা। আর যদি ভাষা, অঞ্চল বা পেশাগত কাজে পারদর্শিতা চান, তাহলে হয়তো WolframAlpha, Yandex বা Baidu হতে পারে আদর্শ। জেনে নিন, বুঝে নিন—কোন সার্চ ইঞ্জিন আপনার জন্য। মনে রাখবেন, সঠিক তথ্য খোঁজার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম জানা মানে কিন্তু অর্ধেক কাজ শেষ।