
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে নাকি কমেছে, সে বিষয়ে তুলনামূলক তথ্য নেই। এটি নিয়ে টিআইবি কাজ করছে। কিন্তু এটা বলতে পারি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক ও সরকারি স্পেসের ক্ষমতাকে অপব্যহার করে বিভিন্ন মহল দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক। এই সরকারের সময়ে আরও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। টিআইবি বর্তমান সরকারের পুরো মেয়াদের ওপর একটি বিশ্লেষণ তৈরির কাজ করছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘সুশাসিত, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়নে টিআইবির সুপারিশ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মো. জুলকারনাইন এবং গবেষণা ও নীতি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা এমন অবস্থায় আছি যে ৫৪ বছর, বিশেষ করে গত ১৫ বছরের যে জঞ্জাল, সেটা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটা চট করে জাদুর কাঠি দিয়ে সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়, এটা মানতে হবে। তবে এই সুযোগটা তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগ রাজনৈতিক দলগুলো কতটা নেবে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; একইভাবে তাদের কার্যপদ্ধতির মধ্যে অর্থ, পেশি ও ধর্মের প্রভাবটা নির্বাচনের আগে ও পরে কতটুকু তাদের প্রভাবিত করবে, সেটার ওপর ফলাফল অনেকটা নির্ভর করবে।
ব্যবসা খাতের সংস্কার নিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা অনেকটা রাজনৈতিক দলের সংস্কারের মতো। এটা ভেতর থেকে আসতে হবে, তাদের নিজেদেরই করতে হবে। ব্যবসায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে চূড়ান্ত বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন। এটা না করা গেলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাভবান হন, অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, যেটা গত ১৫ বছরে দেখা গেছে। এর ফলে রাষ্ট্রকাঠামো দখল হয়েছে। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের অন্যতম পিলার (স্তম্ভ) হিসেবে ব্যবসা খাতের একাংশ কাজ করেছে। সেই অবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাই তারা চাইছেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান শীতল সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এর জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে এটা (বর্তমান পরিস্থিতি) সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়—এটা স্বীকার করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভারত এমন দেশ নয়, যারা সহজে এটা স্বীকার করবে। সেটা একটা বাস্তবতা। কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে এটার কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে না। উন্নতি ঘটার সুযোগ আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই পক্ষের উচ্চ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আছে। সেটা উভয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে। তবে ভারত যদি আরও বেশি বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিতে পারত, কর্তৃত্ববাদের পক্ষে অবস্থান থেকে যদি সরে আসতে পারত, তাহলে সেটি বাংলাদেশের পক্ষে সহজতর হতো।’