আপডেটঃ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ১১, ২০২৫
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন আবারও আলোচনায়। তিনি ছিলেন ঢাকার চিফ হিট অফিসার বাংলাদেশে এমন পদে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি। কিন্তু সম্প্রতি তার স্বামীর মালিকানাধীন একটি সিসা লাউঞ্জে পুলিশের অভিযান নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন তিনি।গত ১৯ আগস্ট গভীর রাতে গুলশান এলাকার ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ নামে একটি সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালায় গুলশান থানা পুলিশ। সেখানে বিপুল পরিমাণ সিসা, হুক্কা সেটআপ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করে। লাউঞ্জটির মালিকানা বুশরার স্বামীর বলে জানা গেছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে প্রায় চার কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেটআপ ও বিভিন্ন মাদক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। জায়গাটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও অনুমোদন ছাড়া সিসা লাউঞ্জ হিসেবে চালানো হচ্ছিল। লাউঞ্জের মূল মালিককে না পেলেও পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।এ ঘটনায় বুশরার স্বামী জাওয়াদ রায়হান, লাউঞ্জ পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিদের বেশিরভাগই সিসা বারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।এদিকে যুগান্তরসহ একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুলশান-বনানী এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় একাধিক সিসা বার গড়ে উঠেছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোর্ট ইয়ার্ড বাজার ছাড়াও মন্টানা, সেলসিয়াস, এক্সোটিক ও আল গিসিনো নামের লাউঞ্জগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছিল। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নাম ব্যবহার করে এসব অবৈধ ব্যবসা চলত, এমনকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হতো।
যুগান্তর সূত্রে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর এসব সিসা বারের অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও সম্প্রতি আবারও প্রভাবশালী মহলের তদবিরে কিছু প্রতিষ্ঠান চালু করার চেষ্টা চলছে। নারকোটিক্স বিভাগে গিয়ে এক গাড়ি ব্যবসায়ী শরিফ আল জাওয়াদ এসব প্রতিষ্ঠানের হয়ে নিয়মিত তদবির করছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। তিনি নিজেকে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুলশান ও বনানীতে সিসা বারের ব্যবসা ছিল প্রকাশ্য গোপন রহস্য। সাবেক মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য এমনকি ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়ে এসব ব্যবসা চলত। বনানীর আল গিসিনো বারের পেছনে মন্ত্রীপুত্র রনি চৌধুরী, গুলশানের কোর্ট ইয়ার্ড বাজার সিসা লাউঞ্জে বুশরা আফরিনের নাম এবং ফারেন হাইট বারে শেখ পরিবারের এক সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর এখন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালকেরা অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। একই সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আবারও নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অবৈধ সিসা ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না, কারণ এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে—যেখানে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও অর্থবিত্তের জটিল যোগসূত্র রয়েছে।
বর্তমানে কোর্ট ইয়ার্ড বাজার সিসা লাউঞ্জের মামলাটি তদন্তাধীন। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুশরার স্বামী বা অন্য আসামিদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হবে না। তবে এ ঘটনায় একসময় জনপ্রিয় “চিফ হিট অফিসার” পদধারী বুশরা আফরিন এবং তার পরিবারের নাম উঠে আসায় বিষয়টি জনমনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
IPCS News : Dhaka :